স্টাফ রিপোর্টার :
হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়ে আসছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কেন্দ্রসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারাও একই বার্তা দিয়েছিলেন কর্মী সমর্থকদের। অনেকেই নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় পাহারা বসালেও উশৃঙ্খল কিছু নেতাকর্মী কোনো নির্দেশনারই তোয়াক্কা করেনি। বিএনপির নাম করে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট সহ চাঁদাবাজীও চালিয়েছে একটি পক্ষ। তাদের প্রত্যেকের তালিকা তৈরীর জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি নেতারা। তালিকা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যেমন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তেমনই দলীয় পদপদবী বহন করা বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশৃঙ্খলাকারীদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে বলে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নাম করে সাধারণ মানুষের বসত বাড়িতে হামলা, আওয়ামী লীগের নিরীহ কর্মীদের মারধর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, পূর্ব শত্রুতার জেরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং চাঁদাবাজীর অভিযোগে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদককে বিএনপি থেকে বহিস্কারের খবর পাওয়া গেছে। একই ধরনের অভিযোগ এসেছে, ফতুল্লার খোঁজ পাড়া এলাকার সন্ত্রাসী মুসলিম, উকিল বাড়ী এলাকার কথিত যুবলীগ নেতা জায়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে। তারা বিগত সময়ে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও বর্তমানে হাওয়া বদলের আভাস পেয়ে বিএনপির পরিচয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ জানিয়েছেন।
তবে বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা বিগত সময়ে বিএনপির হয়ে কোনো মিটিং মিছিলেও ছিলেন না। এর মধ্যে জয়নাল আবেদীন তার ‘বেশভূষা’ পাল্টে এলাকায় নিজেকে একটি তরিকার ‘পীর সাহেব’ বলে প্রচার করে দরবার খুলে বসেছেন। তিনি বিএনপি করবেন না বলেও অঙ্গিকার করেছিলেন। তবে গত ৫ আগস্টের পর আবারও নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে ফতুল্লার উকিলবাড়ী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানো সহ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে জয়নালের বিরুদ্ধে।
এদিকে, দলের নিষেধাজ্ঞার পরও যারা এলাকায় বিশৃঙ্খলা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, তারা বিএনপির কেউ না বলে মন্তব্য করছেন দলীয় নেতারা। উপরন্ত তালিকা তৈরীর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুশিয়ারী উচ্চারন করা হয়েছে।
এই বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে যেই বার্তা দিয়েছেন, আমরা সেই বার্তা অনুযায়ী মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে পাহারা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যারা বিশৃঙ্খলা চালিয়ে যাচ্ছে, হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করছে, তারা কেউ বিএনপির নেতাকর্মী না। তারা বিএনপির নাম ব্যবহার করে সুযোগ নিচ্ছে এবং বিএনপিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। এই সকল সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘যারা বিএনপির নাম দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে, ইতিমধ্যে তারা চিহ্নিত হয়ে গেছে। তাদের তালিকা হচ্ছে। পাড়া মহল্লা থেকে তাদের তালিকা থানা বিএনপির কাছে পৌছে দেয়া হলে থানা বিএনপি যেন একদিনের মধ্যে সেই তালিকা আমাদের কাছে পৌছে দেয়- সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলব। আপনার আত্মীয় বা ছেলে হলেও তার নাম দিয়ে দিবেন, তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। অপরাধের জন্য প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দলের মধ্যে থেকেও যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপ্রিয় দল। শান্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বিগত প্রায় দেড়যুগ ধরে সংগ্রাম করে আসছি। এখন ছাত্র-জনতার এত রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে। যারা বিগত সময়ে বিএনপির রাজনীতিতের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো না, তারা এখন মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। যারা হামলা, লুটপাট ও চাঁদাবাজী করছে, তারা কেউ-ই বিএনপির কর্মী না। তারা সন্ত্রাসী। এটাই তাদের পরিচয়। এই সন্ত্রাসীরা যদি আমাদের দলের কোনো পদপদবী বহন করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি ঘটনাতেই মামলা হবে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশনায় আমরা এলাকাগুলোতে পাহারা দিয়ে যাচ্ছি। মানুষ যেন শান্তিতে থাকে এবং কেউ যেন কোনো বিশৃঙ্খলায় না জড়ায়, সেই লক্ষ্যে মাইকিং করে যাচ্ছি। মন্দিরে পাহারা দিচ্ছি। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরও পাহারা দিচ্ছি, যেন তারা কারো দ্বারা আক্রান্ত না হয়। যারা বিভিন্ন এলাকায় নৈরাজ্য চালাচ্ছে, মানুষের জান-মালের ক্ষতি করছে, চাঁদাবাজী সহ বিভিন্ন সেক্টর দখলে নিচ্ছে, তারা আমাদের দলের কেউ হতে পারে না। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’